১.৩ গিগাহার্জ কোয়াড কোর প্রসেসর, ১ জিবি র্যাম ও ৪ জিবি রম এই বাজেটে এই ফোনটির পারফরমেন্স এ ভিন্নতা এনে দিয়েছে…এই ফোনে ক্যামেরা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫ মেগা পিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা, আর ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা।
চলুন, আর দেরী না করে আমরা ডিটেইলস রিভিউ এ যাই।
প্রথমেই আমরা আলোচনা করবো এ্ই ডিভাইসয়ের উল্লেখযোগ্য ফিচারস।
এই ফোনটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ১ম এই যেগুলো বলতে হয়ঃ
* এন্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট অপারেটিং সিস্টেম
* ডুয়াল সিম, এবং দুই সিমেই ৩জি সাপোর্ট
* ৪ ইঞ্চি IPS WVGA ডিসপ্লে
* ১.৩ গিগাহার্জ কোয়াড কোর প্রসেসর
* Mali-400 জিপিইউ
* ৫১২ এম বি র্যাম
* ৪ জিবি রম
* ৩২ জিবি পর্যন্ত এক্সটারনাল এস ডি কার্ড সাপোর্ট
* ৫ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা
* ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা (০.৪ মেগা পিক্সেল)
* অ্যাক্সেলারো মিটার ৩ডি, প্রক্সিমিটি সেন্সর ও লাইট সেন্সর
* 1500 MAh এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি
* OTA Update সুবিধা
* Air Shuffle, Double Tap To Wake Up, Notification LED এর মত স্পেশাল ফিচারস!
সেটটির সাথে যা যা রয়েছেঃ
Walton Primo E4+ এর বক্সে আপনি যা যা পাবেনঃ
১. ১৫০০ এম এ এইচ ব্যাটারি
২. চার্জার এডাপটার
৩. ডাটা ক্যাবল
৪. ইয়ারফোন
৫. ইউজার ম্যানুয়াল
৬. ওয়ারেন্টি কার্ড
৭. একটি এক্সট্রা স্ক্রিন প্রটেক্টর
অপারেটিং সিস্টেম :
Walton Primo E4+ এ OS হিসেবে আপনারা পাবেন Android 4.4.2
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি :
Walton Primo E4+ ফোনটির ডিজাইন আপনার কাছে যথেষ্ট মানানসই মনে হবে। আপনি ফোন টি হাতে নিয়ে কোন প্রকার অস্বস্তি অনুভব করবেন না, বরং মজাই পাবেন।
ফোনটির ডানদিকে ভলিউম বাটনস আর বাম দিকে পাওয়ার বাটন দেওয়া হয়েছে। এর উপরের দিকে ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাক পোর্ট এবং ইউ এস বি চার্জিং পোর্ট দেওয়া হয়েছে।
ফোনটির পিছনের দিকে রয়েছে 5 মেগা পিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা ও ফ্লাশ এবং লাউডস্পিকার। ফোনটির সামনের দিকে রয়েছে হেডপিস, ফ্রন্ট ক্যামেরা, লাইট ও প্রক্সিমিটি সেন্সর। তাছাড়াও ডিসপ্লের নিচের দিকে রয়েছে ক্যাপাসিটিভ টাচ বাটনস এবং নোটিফিকেশন LED। আসলে এই ফোনে মিডল টাচ বাটন মানে হোম বাটন টিকেই নোটিফিকেশন এল ই ডি হিসেবে ইউজ করা হয়েছে। আর অনেকটা Apple এর Iphone এর মত লাগে,বিশেষ করে হোম বাটন-টি।
Walton Primo E4+ স্মার্টফোনটির উচ্চতা 119.7 মিলিমিটার। সেটটি প্রস্থে 62.5 মিলিমিটার এবং এর প্রশস্থতা 9.3 মিলিমিটার। ব্যাটারি সহ ফোনটির ওজন মাত্র 113 গ্রাম!!
ডিসপ্লে:
Walton Primo E4+ স্মার্টফোনে ৪ ইঞ্চির IPS ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। ডিসপ্লে রেজুলেশন ৮০০*৪৮০ অর্থাৎ WVGA ডিসপ্লে। এতে ১৬.৭ মিলিয়ন রঙ সাপোর্ট করে। ডিসপ্লে ডেনসিটি 234 dpi.
ইউজার ইন্টারফেস:
এই স্মার্টফোনটির ইউজার ইন্টারফেস খুবই সুন্দর করা হয়েছে! এই সেটের স্টক লঞ্চার আপনাদের মোটেই এক ঘেয়েমির মধ্যে ফেলবে না। এছাড়া ফোনটিতে আপনারা পাবেন বেশ কিছু অতিরিক্ত থিম, যা দিয়ে আপনি এই সেটের ইউজার ইন্টারফেসের স্টাইল চেঞ্জ করতে পারবেন যে কোন সময়। আবার আপনি ইচ্ছা করলেই নেট থেকে আরো সুন্দর সুন্দর থিম নামিয়ে ইউজ করতে পারবেন! তাছাড়া, এই সেটে আলাদা আলাদা ভাবে লক স্ক্রিন ও মেইন মেনুর ওয়ালপেপার ও সেট করা যায়। এককথায়, যেকোন ইউজার এই ইউজার ইন্টারফেস এ খুব জলদি ইন্টার্যাক্ট করতে পারবেন এবং ইউজ করে মজা পাবেন। সম্পূর্ণ কাস্টমাইজেবল ইউ আই! তাছাড়া এর ইউ আই ট্রানজিশনও খুব স্মুথ।
চিপসেটঃ
Primo E4+ এ চিপসেট হিসেবে মিডিয়াটেক এর MT6582 চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসেসরঃ
এই স্মার্টফোনে কোর্টেক্স এ-৭ আর্কিটেকচার বেজড ১.৩ গিগাহার্জ ক্লকস্পীড সম্বলিত কোয়াড কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, যেকোন এপ এর প্রসেসিং হবে দ্রুত এবং লাগ বিহীন।
জিপিইউঃ
Walton Primo E4+ এ জিপিইউ হিসেবে Mali-400 দেওয়া হয়েছে। এই বাজেটে যেকোন স্মার্টফোনের জন্য এটি খুবই ভাল জিপিইউ। অবশ্য শুধু জিপিইউ দিয়ে গ্রাফিক্স পারফরমেন্স বিচার করা যায় না, সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন ও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সেটের গ্রাফিক্স পারফরমেন্স আমরা এর নেনামার্ক টেস্ট করেই বুঝতে পারব। নিচেই আপনারা তা দেখতে পাবেন।
র্যামঃ
এই সেটে র্যাম হিসেবে আপনারা পাচ্ছেন 1 GB Ram. র্যাম পারফরমেন্স ও অনেকটাই নির্ভর করে সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন এর উপর। আর এটা বলতে দ্বিধা নেই, এ্ই বাজেটে 1 GB র্যাম এর ফোন পাওয়া, অনেকেটা ভাগ্যের ব্যপার!!!!!
রম ও স্টোরেজঃ
এই ফোনে ৪ জিবি রম দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, এই সেটে ৩২ জিবি পর্যন্ত এক্সটারনাল এস ডি কার্ড সাপোর্ট করে।
ক্যামেরাঃ
Walton Primo E4+ ফোনটিতে 5 মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়াও এই ফোনের স্টক ক্যামেরা এপ্লিকেশন এ অনেক অপশন ও দেওয়া হয়েছে।
এর সাহায্যে আপনি মোটামুটি মানের ভালো ছবি তুলতে পারবেন। নিচের ছবিগুলো দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে কথাটা কতটা সত্যি। তাছাড়া এই সেটের ফ্ল্যাশ যথেষ্ট উজ্বল।
এছাড়া এর VGA ফ্রন্ট ক্যামেরা মোটামুটি পর্যায়ের।
মাল্টিমিডিয়াঃ
এই সেটে ৩.৫ মিলিমিটার এর অডিও জ্যাক পোর্ট দেওয়া হয়েছে। এই সেটের সাথে দেওয়া হেডফোনের কোয়ালিটি ও ভাল। তাছাড়া বিল্ট ইন মিউজিক প্লেয়ার টাও অসাধারণ। এছাড়াও এই ফোনে আপনি 1080p ভিডিও ও কোন ল্যাগ ছাড়া দেখতে পারবেন।
গেমিং:
Walton Primo E4+এ আমরা অনেক ভাল ভাল গেম ল্যাগ ছাড়াই খেলতে পেরেছি। সাবওয়ে সার্ফার, টেম্পল রান ইত্যাদি গেম খেলতে আমরা তেমন কোন সমস্যার সম্মূখীন তো হই-ই নি, বরং হাই গ্রাফিক্স এ Asphalt 8, Modern Combat 4, কোন ল্যাগ দেখা যায় নি!! আমরা সত্যিই ফোনটির গেমিং পারফরমেন্স এ খুবি খুশি হয়েছি। তাছাড়া Temple Ram, Bike Mayhem থেকে শুরু করে যে কোন HD Games খেলতে পারবেন একদম সাবলিল ভাবে।
কানেক্টিভিটিঃ
এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, হটস্পট, ওয়্যারলেস ডিসপ্লে শেয়ারিং সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া এতে জিপিএস ও এ জিপিএস নেভিগেশন সুবিধা তো আছেই।
সিমঃ
এই ফোনে একটি মাইক্রো সিম ও আরেকটি নরমাল সিম ইউজ করা হয়েছে। Primo E4+ এর দুইটি সিমের দুটিই ৩জি সাপোর্টেড।
সেন্সরঃ
Walton Primo E4+ এ Accelerometre 3D, Proximity ও Light Sensor দেওয়া হয়েছে।
ব্যাটারিঃ
এই ফোনে ১৫০০ এম এ এইচ এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে। তাই এই সেটের ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকার কোন দরকার নেই।
বেঞ্চমার্ক টেস্টসঃ
সাধারণত কোন সেটের পারফরমেন্স তার বেঞ্চমার্ক টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়। আমরা তাই এই সেটে AnTuTu বেঞ্চমার্ক টেস্ট রান করি এই সেটের পারফরমেন্স দেখার জন্য। স্কোর এসেছে 19497!!!! যথেষ্ট ভালো একটি স্কোর।
গ্রাফিক্স টেস্ট করার এপ নেনামার্ক এও এসেছে ভাল স্কোর!! ৫৫.৫ !!!! কাজেই ভাল ভাল গেম ল্যাগ ছাড়াই খেলা যাবে!!
Air Shuffle:
এই ফোনে এই স্পেশাল ফিচারটি ব্যবহার করে ফোনটিতে এক্সট্রা মজা দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এই ফিচারের ফলে আপনি আপনার ফোনটির উপরে হাত আনা নেওয়া করলে ছবি ও গান চেঞ্জ, ক্যামেরায় ছবি তুলা… ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন। এটি আপনি সেটিংস এ গিয়ে সেট করে নিতে পারবেন।
ও.টি.এ:
OTA(Over The Air) আপডেট সুবিধার ফলে পিসির সাহায্য ছাড়াই আপনি আপনার সেট এর যেকোন প্রকার অফিসিয়াল সিস্টেম আপডেট ফোনের সাহায্যেই ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। কোন প্রকার সিস্টেম আপডেট চেক এর জন্য কাস্টোমার কেয়ার এও যোগাযোগ করতে হবে না।
নোটিফিকেশন এল ই ডি (Notification Matters!! )
এই ফোনে নোটিফিকেশন এল ই ডি ইউজ করায় ফোনের ডিসপ্লে অফ থাকলেও আপনি ফোনের দিকে একবার তাকিয়েই বুঝবেন কোন নোটিফিকেশন আছে কিনা। মূলত এই মোবাইলের হোম বাটনটির লাইট-ই নোটিফিকেশন এল ই ডি লাইট হিসেবে ইউজ করা হয়েছে।
মূল্যঃ
স্টাইলিশ ও ভাল কনফিগারেশনের এই ফিচারড সেটটির মূল্য ওয়াল্টন কর্তৃপক্ষ মাত্র ৫৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে!! এই বাজেটে যে কোন ফোনের চেয়ে এই ফোন স্টাইল, পারফরমেন্স ও ফিচার এর দিক থেকে ভাল তা চোখ বন্ধ করেও বলা যায়।
আবারো ধন্যবাদ দিতে হয় ওয়াল্টন কে, এই বাজেটে বিশেষ করে 1GB র্যাম এর একটি ফোন বাজারে আনার জন্য। বিশেষ করে যারা কম বাজেটে 1 GB র্যামের মোবাইল চান তাদের জন্য এই মোবাইলটি হতে পারে একটি আদর্শ মোবাইল।
Primo E4+ এর যে বিষয় গুলো আপনার ভালো লাগবে:
* চমৎকার স্টাইল
* বাজেটের তুলনায় ভাল কনফিগারেশন
* ডুয়াল সিম ৩জি সাপোর্ট
* OTA
* Air Shuffle, নোটিফিকেশন এল ই ডি এর মত ফিচার
Primo E4+ এর ভাল না লাগা দিক গুলোঃ
আসলে খারাপ লাগা দিক বলতে গেলে নির্ভর করবে আপনার বাজেট আর মোবাইলের কনফিগারেশনের উপর। আমার কাছে খারাপ কোন কিছু চোখে পড়েনি। ৫,৯৯০ টাকার একটি মোবাইল যেটাতে 1 GB র্যাম পাচ্ছি সেটাই তো বহুত কিছু। আর আপনি চাইলে যে কোন ব্র্যান্ড মোবাইলের খুঁত ধরতে পারবেন। আসলে আমাদের কাছে যেটা খারাপ লাগে বা যেটা আমরা চাই সেটা যদি না পাই তাহলে সেটাই তো সেই মোবাইলের খারপ লাগ দিক হয়ে গেল, তাই নয় কি?
শেষকথাঃ
এই বাজেটে যেকোন ফোন কেনার সময় যে কোন ইউজার এর ১ম পছন্দ এই ফোন টি হওয়া উচিৎ। আমার মতে, এই ফোনটি এই বাজেটের সেরা ফোন!! বাকিটা আপনাদের উপর ডিপেন্ড করবে।
বাংলাদেশের বাজারে কম দামের স্মার্টফোন এনে Walton কোম্পানি তাদের সুনাম দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলছে। আগামী দিনেও যেন তারা আরো ভাল মানের স্মার্টফোন আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের জন্য কম দামে আনতে পারে সে প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে যারা যারা মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা যেন খুব সহজেই কম বাজেটের মোবাইল ফোন কিনতে পারে, সেই প্রত্যাশা আমরা Walton এর কাছে করতেই পারি।